শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
৭ই নভেম্বর এবং জাতীয়তাবাদের চেতনা।
প্রিয় দেশবাসী,আসসালামুআলাইকুম।
আমি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলছিঃ
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিয়ার, পুলিশ, আনসার এবং অন্যান্যদের অনুরোধে আমাকে সামায়িকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চীফ মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর ও সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে।
এ দায়িত্ব ইনশাআল্লাহ্ আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।আপনারা সকলে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ দায়িত্ব পালন করুন।
দেশের সর্বস্থানে অফিস-আদালত, যানবাহন, বিমান বন্দর,নৌ-বন্দর, কলকারখানা গুলো পূর্ণভাবে চালু থাকবে। আল্লাহ্ আমাদের সকলের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। ৭ই নভেম্বর এবং বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব অতপ্রোতভাবে জড়িত। ৭ই নভেম্বর কে কখনো ইতিহাসের পাতা থেকে ঝেড়ে ফেলা সম্ভব না। অভাবনীয় সম্ভাবনাময় সদ্য জন্মনেওয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট দেশ-বিদেশের নানাবিধ ষরযন্ত্রে যখন খাদের কিনারায়, তখন সংগঠিত হয় সিপাহী জনতার বিপ্লব।ঘড়ির কাটা রাত ১২টা পার হলেই ক্যান্টেনমেন্টের আকাশে ফাঁকা গুলির শব্দে শুরু হয় এক ঝাঁক সাচ্চা দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর সৈনিকদের বিপ্লব। যেই বিপ্লবের সাথে সকাল হতেই একত্রিত হয় বাংলার জনতা।যা পরবর্তীতে সিপাহী জনতার বিপ্লবে রুপ পায়।মুখে নারায়ে তাকবির, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ,সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই অফিসারের রক্ত চাই শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত পুরা এলাকা।মহান স্বাধীনতার ঘোষক এবং দেশ প্রেমিক জনপ্রিয় সেনাপ্রধান জনাব জিয়াউর রহমান কে কারাগার থেকে উদ্ধার করে সেনা সদস্যারা। এবং জনাব জিয়াউর রহমানকে পুনরায় দায়িত্বে পূর্ণবহাল করার পর পুরা ঢাকা শহর জুড়ে সিপাহী জনতা আনন্দ মিছিলে এক কাতারে নেমে আসে।
ভঙ্গুর অর্থনীতি, অস্থিতিশীল রাজনীতি,হানা-হানি, মারা-মারি তে জর্জরিত সদ্য হামাগুড়ি দেওয়া একটা রাষ্টের দায়িত্ব পরে জিয়াউর রহমানের উপর।বলতে গেলে দায়িত্ব উনাকে খোঁজে নিয়েছেন।দায়িত্ব নেওয়ার পর উনি কাল-বিলম্ব না করে লেগে পরেন দেশ গোছাতে। দফায় দফায় মিটিং করে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ব্যারেকে ফিরিয়ে নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে ফিরিয়ে আনেন চেইন অব কমান্ড। ৬ই নভেম্বর খালেদ মোশারফ, শাফায়েত জামিল সহ কিছু সেনা সদস্য খন্দকার মোশতাককে সরিয়ে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্টপতি হিসাবে শপদ নিতে রাজি করান।তবে ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতা বিপ্লবের পর আবারো মোশতাক কে রাষ্টপতি হিসাবে পূর্ণবহাল করার আওয়াজ উঠে তবে জনাব জিয়ার অনিচ্ছার কারনে তা আর হয়ে উঠে নাই। রাষ্টপতি সায়েম কে নিয়ে রাষ্ট সংস্কারের গুরু দায়িত্ব পালন করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। ৭ই নভেম্বর সংগঠিত না হলে বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্নভাবে রচিত হতে পারত। যে ইতিহাসে থাকত দাসত্ব।
রাষ্টপরিচালনা গুরু দায়িত্ব পালন করত মূলত জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল রাষ্টপতি জনাব সাদাত সায়েম পদত্যাগ করলে জনাব জিয়াউর রহমান রাষ্টপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।রাষ্টপতি হিসাবে শপদ নেওয়ার পর উনার অক্লান্ত পরিশ্রম, দক্ষতা এবং একনিষ্টতায় দেশকে নিয়ে যান এক অনন্য উচ্চতায়।সকালের নাস্তা করে হেলিক্যপ্টার করে ছুটে যেতেন কখনো এই জেলা তো কখনো কোন প্রত্যান্ত এলাকার কোন এক গ্রামে। গিয়ে খোঁজ নিতেন গ্রামবাসীদের। খাবার চেয়ে তাদের সাথেই খেতেন খাবার। গ্রামবাসিকে অনুপ্রানিত করতেন স্বনির্ভর হতে। প্রেসিডেন্ট জিয়া উনার জীবদশায় সারাজীবন দেশবাসিকে অনুপ্রাণিত করেছেন স্বনির্ভর হতে।স্বনির্ভরতা সংরামের পাশাপাশি সেচ সম্প্রাসারনে যুগান্তকারী খাল খনন কার্য, দেশে কৃষি বিপ্লব, শিল্প সম্প্রাসারন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে ভুমিকা,যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রানালয়,গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটি,গ্রাম সরকার, স্বচ্ছেশ্রম কার্য, রপ্তানিমুখি বানিজ্য এবং প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর দ্বার উনিই উন্নেচন করেছনে যার ফল সারা মধ্যপ্রাচ্য জোরে এখনো বাংলাদেশ ভোগ করছে।ক্ষণজন্মা এই রাষ্টপতি মাত্র কয়েকবছরে বাংলাদেশকে দুনিয়ার কাছে তুলে ধরেছেন এক অনন্য বাংলাদেশ হিসাবে।
জিয়াউর রহমানের দেশের উন্নয়নকল্পে নানবিধ কার্য সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের কাছে উনাকে ক্যারিশমাটিক লিডার হিসাবে গড়ে তুলেছেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়া রাজনীতিকে বেসামরিক করার নিমিত্তে দেশে গনতান্ত্রায়নের উদ্যোগ নেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর ব্যবস্থা নেন। তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামীলিক সহ বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল নতুন করে নিবন্ধন নেন। যেখানে চাইলে উনি সেনাসরকারের অধীনে দীর্ঘ কালীন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারতেন সেখানে গণতন্ত্রমনা দেশপ্রেমিক মেজর জিয়া রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির আভাস দিয়ে বলেন, ‘’ I WILL MAKE POLITICES DIFFICULT FOR THE POLITICIANS’’
১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্টপতি নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেন।যেই নির্বাচনে আওয়ামীলিকের প্রার্থী জনাব আতাউল গনি উসমানী সহ ১০ জন প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেন।মেজর জিয়া ভোট পান ৭৬.৬৩%। দেশের মানুষের অভাবনীয় ভালবাসায় সিক্ত প্রেসিডেন্ট জিয়া এখানে থেমে না থেকে বাংলাদেশের ভূমি অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সীমারেখার মধ্যবর্তী আমাদের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক এলাকা; ধর্ম ও গোত্র নির্বিশেষে দেশের জনগণ; আমাদের ভাষা বাংলা ভাষা; আমাদের সংস্কৃতি-জনগণের আশা আখাংকা, উদ্দীপনা ও আন্তরিকতার ধারক ও বাহক আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি; দুশো বছর উপনিবেশ থাকার প্রেক্ষাপটে বিশেষ অর্থনৈতিক বিবেচনার বৈপ্লবিক দিক; আমাদের ধর্ম- প্রতিটি নারী ও পুরুষের অবাধে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতি-নীতি পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা; সর্বোপরি আমাদের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ যার মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শন বাস্তব ও চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে’ এই সব বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব প্রদান করেন যা ব্যপক প্রশংসা কুড়ায়। শুধুমাত্র ভাষার উপর ভিত্তি করে আমরা বাংঙ্গালী হিসাবে পরিচিতি দিতে পারি না, কেননা আমাদের দেশের উপজাতিরা তাইলে নিজেকে কি হিসাবে পরিচয় দিবে? তাছাড়া কলকাতার বাংগালীরাও বাংলা ভাসায় কথা বলেন। তাই মেজর জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়াতাবাদ তত্ত্বকে সবাই সাদরে গ্রহন করেন।সময়ের কালক্রমে প্রেসিডেন্ট জিয়া জাগদল বিলুপ্ত করে দক্ষিন, ডান,বাম, মধ্য সবপন্থি এবং সকল পেশার মানুষের সমন্বয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়া নতুন দলের ঘোষণা করেন। রাজনীতিকে উনি পুরোদমে রাজপতে নিয়ে আসেন। বন্ধ করেন সামরিক আইন।১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে।সবার গ্রহণযোগ্য সেই নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করেন। যেই নির্বাচনে বিএনপি একাই ২০৭টি আসন পায় এবং আওয়ামিলিক ৩৯টি আসন পেয়ে বিরোধীদল হয়। এইভাবে একজন সৈনিক জিয়ার হাত ধরে বাংলাদেশে গনতন্ত্র মুক্ত পেয়ে জনগণের কাছে আসে। তার ধারবাহিকতায় মেজর জিয়ার পরলোকগমনের পর উনার সহধর্মিণী বেগম জিয়া রাজপ্রসাদ থেকে রাজপতে নেমে স্বৈরাচার এরশাদ পতন করেন। জাতীয়তাবাদ ধারন করে পরবর্তীতে নানা অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে আপোষহীন নেত্রী বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় নিজেকে উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছেন।বার বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হয়েও উনাকে বারংবার কারাকারে যেতে হয়েছে কেবল বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশের গনতন্ত্র রক্ষার প্রত্যয়ে। পিতা দেশের রাষ্টপতি মা প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘরেজন্ম নিয়ে যেখানে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জীবন পার করার কথা সেখানে জনাব তারেক রহমান জাতীয়তাবাদ বুকে ধারন দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে চষে বেড়িয়েছেন সমগ্র বাংলাদেশের আনাচে কানাচে জাতীয়তাবাদী সৈনিকদের দ্বারে দ্বারে যোগ্য পিতার যোগ্য ছেলের ন্যায়। তবে জনপ্রিয়তায় কাল হল জনাব তারেক রহমানের। ১/১১ এর অবৈধ সরকার এবং স্বৈরাচার আওয়ামীলিকের রোষানলে পরে সহ্য করতে হয় অকথ্য নির্যাতন এবং হতে হয় অজস্র মিথ্যা মামলার আসামি। চলে যেতে হয়েছে নির্বাসনে। দেশ প্রেমিক আগামীর রাষ্টনায়ক থেমে থাকেন নাই একটা দিনের জন্যও। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ ফ্যাসিস্টমুক্ত একটা দেশ। পরিশেষে বলতে পারি জাতীয়তাবাদ যতদিন থাকবে বাংলাদেশের বুকে ততদিন আমি আমরা সবাই এক এক জন জিয়াউর রহমান, একেকজন বেগম খালেদা জিয়া, একেকজন তারেক জিয়া। জাতীয়তাবাদ জিন্দাবাদ।
মামসেদ হাসান
মুক্তচিন্তার লেখক ও জাতীয়তাবাদের গবেষক।
mamsed.hasan2020@gmail.com